শহর সমবায় ব্যাঙ্ক – সমস্যা ও প্রতিকার
সাম্প্রতিক সময়ে দেশেরকয়েকটি সমবায় ব্যাংকের উপররিজার্ভ ব্যাংক নিষেধাজ্ঞা জারিকরার খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর মানুষের মনে সমবায়ব্যাংকের বিষয়ে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
কিছুদিনআগে YES Bank এধরনের সমস্যা হলে তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে SBI এগিয়ে এসে বিরাট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।ইতিপূর্বে GLOBAL TRUST BANK উঠে যাওয়ার উপক্রম হলে তাকে Oriental Bank of Commerce এর সঙ্গে সংযুক্তি করণ করা হয়।
সংবাদ মাধ্যমে সমবায়ের সাফল্যের কথা লেখা হয়না, সমস্যাকে বহু গুণ বাড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।রিজার্ভ ব্যাংক গত ১৬.০৮.২০২০ B.R.Act এর 35A ধারা অনুসারে দেশের ৩২টি ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের নগদ লেনদেনের উপর ও ব্যাঙ্কের কিছু কাজকর্মের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, ব্যাঙ্কগুলি কিন্ত বন্ধ করে দেয়নি। এর মধ্যে বেশীরভাগ ব্যাঙ্ক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের রাজ্যের ইউনাইটেডকোঅপারেটিভব্যাঙ্ক, বাগনান ও কলকাতা মহিলাসমবায় ব্যাংক এইনিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে দেশের শহুরে নিম্ন আয়ের মানুষজন –শ্রমিক দোকানমালিক ও মধ্যবিত্তের আর্থিক প্রয়োজনে তাগিদেই এই সমবায় সমিতিগুলোর জন্মহয়েছিল। কালক্রমে এইসমিতিগুলো রিজার্ভ ব্যাংকের লাইসেন্স পেয়ে শহর সমবায় ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত হয়।
জানাযায় যে গুজরাটের বরোদা (now Vadodora) শহরে ১৮৮৯সালে Anoyna Sahakari Mandali Co operative Bank Ltd দেশের প্রথমস মবায় ব্যাঙ্ক মাত্র ২৩জ নসদস্য ও ৭৬টাকা মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করে ,যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মহাজনদের হাত থেকে শহুরে মানুষকে রক্ষা করা। দূর্ভাগ্য যে এই প্রাচীনত মসমবায়ব্যাঙ্কটিকে ২০০৭সালের সেপ্টেম্বরমাসে B.R Act এর সেকশন ৩৫ অনুযায়ী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যখন বন্ধের নির্দেশ দেয়,তখন বরোদাশহর ও তার আশপাশে ব্যাঙ্কের ১০টি শাখা ছিল ও শেয়ার হোল্ডারের সংখ্যা ছিল ২৬০০০। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে ব্যাঙ্কটি বন্ধহয়ে যায়।

মনে রাখা দরকার যে পশ্চিম ভারতের বেশীর ভাগ শহর সমবায় ব্যাঙ্কগুলো গড়ে উঠে ছি লসম্প্রদায় (Cast)ভিত্তিতে।

আমাদের রাজ্যে শহর সমবায় ব্যাঙ্কগুলি গড়ে উঠার পেছনে মূলচালিকা শক্তি ছিল সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন। শিল্পেকর্মর ত শ্রমিকদের মহা জনীশোষণের হাত থেকে বাঁচাতে ও নিজেদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে এই ক্রেডিটসোসাইটিগুলি গড়ে উঠে। কোন কোন জায়গায় প্রগতিশীল মধ্যবিত্তের চেষ্টায় এই ব্যাঙ্কগুলি গড়ে উঠেছে। ভাগীরথীর দুইতীরে, শিল্পোন্নত হাওড়া, হুগলী ,দুই২৪পরগনা, নদীয়া জেলায় মূলতঃ শহর সমবায় ব্যাঙক গুলি গড়ে ওঠেছিল। পরবর্তী কালে মেদিনীপুর বাঁকুড়া জেলায় বেশ কিছু শহর সমবায় গড়ে উঠেছে।
পরিতাপের বিষয় হলো উত্তর বঙ্গের জেলাগুলিতে শহর সমবায় ব্যাঙ্কের বিকাশ ঘটেনি। মালদা শহরে একটি ব্যাঙ্ক থাকলেও জলপাইগুড়ি সমবায় ব্যাঙ্ক টিলিকুইডেট হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে শহর সমবায় ব্যাঙ্কের বিকাশনা হওয়ার কারণ কি সেটা অনুসন্ধানের বিষয়, সমবায়ীরা নিশ্চয় বিশ্লেষণ করবেন। তবে আমার মতে উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শ্লথতার অন্যতম কারণ শহর সমবায় ব্যাংকের অনুপস্থিতি। সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা বিকল্প অর্থনীতির পথ উন্মুক্ত করে।
আমাদের রাজ্যের ৪৮ টি শহর সমবায় ব্যাঙ্কের মধ্যে ১০টি ব্যাঙ্ক রুগ্ন হয়ে পরে ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে। ব্যাঙ্কগুলি হলো ১. বাঁটরা ২.কাসুন্দিয়া ৩. বালি ৪. ভাটপাড়ানৈহাটি ৫.বরাহনগর ৬.বোড়ালইউনিয়ন ৭.পানিহাটি ৮.সিউড়িফ্রেন্ডসইউনিয়ন ৯.রামকৃষ্ণপুর ১০.রাণাঘাট।
এই অবস্থায় রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের বৃহত্তম সংগঠন নিখিল বঙ্গ সমবায় ব্যাঙ্ক কর্মচারী ফেডারেশন রাজ্যের রুগ্ন শহর সমবায় ব্যাঙক গুলির আমানতকারীদের ও কর্মচারীদেরর ক্ষার্থে এক দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম পদ্ধতি শিথিল করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে দাবি জানানোর পাশাপাশি রাজ্যসরকারের কাছে রুগ্ন ব্যাঙ্কগুলির জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি জানায়। রাজ্য সরকার রুগ্ন ব্যাঙ্কগুলি্র আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখাওপূণর্জীবনের জন্য রাজ্য সরকারের কি করণীয়তা সুপারিশ করার জন্য রাজ্য সমবায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে তিনজনের একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করেন যার সদস্যছিলেন শ্রীবিক্রমসেন, স্পেশালসেক্রেটারি, ফিন্যান্স ও শ্রী অশোকঘোষ, ডেপুটীরেজিষ্ট্রার (আরবানক্রেডিট) । এই কমিটি অতি দ্রুততার সঙ্গে সমস্ত খতিয়ে দেখে রুগ্ন ব্যাঙক গুলির জন্য আর্থিক সহায়তা সহ বিভিন্ন সুপারিশ করেন। রাজ্যসরকার কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়ে রুগ্ন শহর সমবায় ব্যাঙ্কগুলির জন্য মোট ৬৯৮০.৩০ লক্ষ টাকা এক কালীন অনুদান হিসাবে রাজ্য সরকারকে দেওয়ার সুপারিশ করেন, যাতেব্যাঙ্কগুলি ৯% CRAR অর্জন করে নেগেটিভ নেট ও য়ার্থ কাটিয়ে নিজস্ব ঋণ দাদন করতে পারে। মনে রাখতে হবে ভারতের একটি মাত্র রাজ্য সরকার, যারা রুগ্ন শহর সমবায় ব্যাঙ্ক ঝ পূণর্জীবনের জন্য আর্থিক অনুদানদে ও য়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন এবং তাপরবর্তী বছরগুলোতে ও কার্যকরছিল। ভাটপাড়া নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্ক ছাড়া ৯টি ব্যাঙ্ক অনুদান গ্রহন করলেও কাসুন্দিয়া, বরানগর ও রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্ক শেষ পর্য্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ভাটপাড়া নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কে আমাদের সংগঠনের নেতৃত্ব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ফলে স্থানীয় পৌরসভার ফান্ডকে ব্যবহার করে, NPA আদায় করেও নতুনন তুন স্কীমে ঋণ দাদন করে ব্যাঙ্ককে সবল ব্যাঙ্কে পরিবর্তন করতে পেরেছেন, তার প্রশংসা করেছেন এক্সপার্ট কমিটি।
অশোক ব্যানার্জী কমিটি শুধু আর্থিক সহায়তার কথা বলেননি, রিজার্ভব্যাঙ্ক ও রাজ্য সমবায় দপ্তরের মধ্যে এক্তিয়ারের সীমা রেখার কথাও বলেন। সমবায় দপ্তর দেখবেন –গণতান্ত্রিক ভাবে ব্যাঙ্কের পরিচালক মন্ডলী নির্বাচন, বাইল পরিবর্তন, নতুন শেয়ার হোল্ডার গ্রহন ও তাদের অধিকার সুরক্ষিত করা এবং বার্ষিক সাধারণ সভা করা। অপর দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে বিষয়ে লক্ষ্য দে বে – Loan & Advance ও Investment, নিয়মিতইন্সপেকশন ও তার রিপোর্টের ভিত্তিতে কি ব্যবস্থানে ও য়া হয়েছে,শাখা লাইসেন্সিং, অডিটরনিয়োগ ,সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাঙ্কের নিজস্ব মুখ্যআধিকারিক নিয়োগ ওদূর্বল সমবায় ব্যাঙ্ককে সবল সমবায় ব্যাঙ্কের সঙ্গেসংযুক্তিকরণ।
ধীরে ধীরে ভাটপাড়া নৈহাটি, বালি, বাঁটরা, বোড়াল, রানাঘাট , সিউড়িফ্রেন্ডস, রিজার্ভব্যাঙ্কের বিধিনিষেধের বাইরে এলেও পানিহাটি, খড়দহ সহ আরও দুটি ব্যাঙ্ক রুগ্ন বলে চিহ্নিত।
শহর সমবায় ব্যাঙ্কগুলির রুগ্নতারকার ণগুলি হলো – ১. খুব ছোট এরিয়া অফ অপারেশনয দিও বর্তমান আইনে এটা বাড়ানোর সুযোগ আছে ২. ব্যাঙ্কের বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে অনীহা, বেশীর ভাগ ব্যাঙ্কের একটি কি দুই টি অ ফিস।
৩. পরিচালকদের ব্যাঙ্ক ও আধুনিক ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব
৪. রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বানিজ্যিক ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য Prudential Norms শহর সমবায় গুলিতে কঠোর ভাবে প্রয়োগ। ৫.কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আগ্রহে রঅভাব ৬. বেশীর ব্যাঙ্কের পরিচাল করা রাজ নৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে ননা ৭.কর্মচারীরাও নিজেদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে উদাসীন।৮. বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুসারে সব সহর সমবায় ব্যাঙ্ককে কোর ব্যাঙ্কি ব্যবস্থায় (CBS) নিয়ে আসতে বলা হলেও এখনও অনেক ব্যাঙ্কে কোন অগ্রগতি ঘটেনি।
আমাদের বুঝতেহ বে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক, অতি আধুনিক দেশী বিদেশী ব্যাঙ্কের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে। আমাদের মূলধ নহলো আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদেরস ঙ্গেআ মাদের সুসম্পর্ক। সেইসম্পর্ক ও দ্রুততর পরিষেবার মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ ও ঋণদা দন ওআদায় বাড়াতে পারি। ব্যাঙ্কের ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তাও উন্নতি নিশ্চিত হয়।
গত ২৬শে জুন ২০২০ ভারত সরকার অর্ডিন্যান্সজারীকরে B.R Act 1949 এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে ছেনযেগুলি রাজ্য সমবায় ব্যাংক, জেলাকে ন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক ও শহর সমবায় ব্যাংকে প্রযোজ্য হবে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের আলাদা বক্তব্য আছে এই অল্প পরিসরে এনিয়ে আলোচনার অবকাশনেই।
আমরা মনে করিস মবায় ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো গত পরিবর্তন করে রাজ্যেএ কটি মাত্র সমবায় ব্যাঙক গঠনের মাধ্যমে সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সম্প্রসারণ সম্ভব, রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তে সমবায় ব্যাঙ্ককে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।